স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের গুরত্ব নিউজ নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২০ ১৯৬৩ সনে দক্ষ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট গঠনের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় চিকিৎসা অনুষদ ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের অধীনে ঢাকায় স্থাপিত হয় তৎকালীন প্যারা মেডিকেল ইনস্টিটিউট ঢাকা বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজি ঢাকা। এরপর ১৯৭৫ রাজশাহীতে ২য় ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়। উক্ত ইনস্টিটিউটে কোর্স সমুহ : ১। মেডিকেল টেকনোলজি (ল্যাবরেটরী, ডেন্টাল, রেডিওগ্রাফী, এসআইটি, রেডিও থেরাপি, ফিজিও থেরাপি, বর্তমানে আরো ২ টি ওটি এসিস্ট্যান্ট ও আইসিইউ এসিস্ট্যান্ট। ২। ফার্মেসী ভর্তির সর্বনিম্ন যোগ্যতা – ক) এসএসসি জীববিজ্ঞান সহ বিজ্ঞান বিভাগ নির্ধারিত গ্রেড পয়েন্ট। ১৯৮৩-৮৪ সনে রাজপথে সফল ছাত্র অন্দোলনে ৩ বছরের ডিপ্লোমা, ১৯৮৯ সনে প্রতিষ্ঠানের নাম ইনস্টিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজি ও পদবী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট করা হয়। ১৯৯০ সনে ছাত্র ও পেশাজীবিদের যৌথ রাজপথে অন্দোলনে ও ১ দিনের কর্মবিরতিতে যৌক্তিক দাবি ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারদের ন্যায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের জাতিয় বেতন স্কেলের ১১শ গ্রেড প্রদান করা হয়। উক্ত ৩ টি সফল অন্দোলনে রাজপথে থাকার গৌরব অর্জন করেছিলাম। এরপর সম ডিপ্লোমা হওয়া সত্বেও ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ার ও নার্সদের ২য় শ্রেনির মর্যাদা সহ ১০ গ্রেড দেওয়া হলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ফাইল আটকা পরে যায় রহস্যের জালে। এর পর জাতির ভাগ্যে নেমে আসে ষড়যন্ত্রে কালো থাবা। একই ধরনের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে কারিগরী বোর্ড যেখানে মানবিক, বানিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রিদের যে কোন বয়সে শুধুমাত্র এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই ভর্তির বিধান রেখে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করতে থাকে বেসরকারি পর্যায়ে। এরপর সরকারি পর্যায়ে আরো ৯ টি সহ বেসরকারি পর্যায়ে ৭০/৮০ ইনস্টিটিউটে একই কারিকুলাম অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০০৯ ঢাকা ও রাজশাহী আইএইচটি তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইন হেল্থ টেকনোলজি কোর্স(৪ বছর মেয়াদি) চালু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্টগন ত্রিভুজের ৩ টি বাহুর ন্যায় কাজ করে। এর যে কোন একটি বাহু ছাড়া ত্রিভুজ যেমন সম্ভব না তেমনি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় ডাক্তার, নার্স এবং টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট অতি গুরত্বপূর্ণ। এবার আসা যাক টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট দায়িত্ব সমুহে : ১। সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগিদের নমুনা অাধুনিক প্রযুক্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্নয় করে ডাক্তারকে চিকিৎসা প্রদানেন জন্য সহায়তা দিয়ে থাকেন। ২। মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন নমুনা কালচার এন্ড সেনসিটিভিটি (সিএস)পরীক্ষার মাধ্যমে রোগির জন্য কোন এন্টিবায়োটিক কার্যকর আর কোনটি কার্যকর নয় তা রিপোর্টে উল্লেখ করে কার্যকর এন্টিবায়োটিক গুলির লিখে ডাক্তারকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। ৩। কোন দম্পতির কেউ সন্তান দানে সক্ষম না অক্ষম তা জানিয়ে অথবা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সন্দেহ জনক পিতৃত্ব নির্ণয় করে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন। ৪। ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করে ভেজাল খাদ্য তালিকা করে তা বর্জনের ব্যবস্থা নিতে এবং খাদ্য প্রস্তুত কারি কোম্পানির বিরোদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে সহায়তা করা। ৫। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ টেষ্টিং ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন কোম্পানির বাজারজাত ঔষধের গুনাগত মান পরীক্ষা করে রোগির জন্য শুধু ভাল গ্রহণ করতে ব্যবস্থা নেওয়া। ৬। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে কোন মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত করে আইনি সহায়তা করা। ৭। আইডিসিআর এর বিএসএল ক্যাটাগরি -৩ ল্যাব, আইসিডিডিআরবি ল্যাব সহ দেশের সকল গবেষণাগারে নিয়োজিত থেকে বিশেষ ভুমিকা রাখা। ৮। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের টেকনোলজিস্ট গন প্রশংসা সহিত কাজ করে আসছেন দীর্ঘ দিন যাবত। ৯। ট্র্যান্সফিউশ মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে নিরাপদ রক্ত বা রক্তের উপাদান পরিসন্চালনে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকেন। ১০। ম্যালেরিয়া উচ্ছেদ, ফাইলেরিয়া নির্মূল, ও পলিও মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গন দায়িত্বশিলতার সাথে কাজ করে কাংখিত লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ১১। ফার্মাসিস্ট গন ঔষধের গুনগত মান, ব্যবহারের মাত্রা, মেয়াদ উত্তীর্ণ, সমিক্ষার মাধ্যমে ভুমিকা রেখে আসছেন। ১২। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওগ্রাফী সকল প্রকার এক্সরে, সিটি স্কান, এম,আর,আই সহ সকল প্রকার ইমেজিং এর মাধ্যমে রোগনির্ণয় ভুমিকা রাখেন। ১৩। সেনেটারি ইন্সপেক্টর গন ভোক্তা আইনে ভেজাল মুক্ত ও নিরাপদ খাদ্য সকল জনগনের জন্য নিশ্চিত করতে গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকেন । ১৪। ফিজিও থেরাপিস্টগন ফিজিও থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে প্যারালাইজড সহ অন্যান্য রোগির চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। ১৫। রেডিও থেরাপিস্ট গন ক্যানসার রোগীদের বিভিন্ন ধরনের রে বা থেরাপি দিয়ে রোগিকে সুস্থ করে তুলতে ভুমিকা পালন করে আসছেন। ১৬। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ডেন্টাল গন দন্ত ও মুখমন্ডলের চিকিৎসা সেবায় ভুমিকা রাখেন। ১৭। ওটি ও আইসিইউ সহকারী গন সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখেন। এবার আসা যাক বর্তমান প্রেক্ষাপট। সময়ের গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে চিকিৎসা সেবা। বাড়াতে হয়েছে হাসপাতালের সংখ্যা, বেড সংখ্যা, বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়েছে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত জনবলের। চিকিৎসা সেবা গতিশিল করতে বাড়ানোর প্রয়োজন হয়েছে ডাক্তার, নার্স এবং টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট জনবল। যে কারনে ডাক্তার, নার্সদের শুন্যপদ পুরন সহ নতুন পদ সৃষ্টি করে তাতে নিয়োগদান করে চিকিৎসা সেবায় যুক্ত হয়েছে নব দিগন্ত। ১৯৯০ সনে সদর হাসপাতালে ডাক্তারে জনবল ৩ গুন বৃদ্ধি করে বর্তমান জনবল ৪৭ জন করা হয়েছে। নার্সের জনবল ১১ থেকে ১৫০ এ উন্নতি করে চিকিৎসা সেবা চাহিদা অনুযায়ী যুগোপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট গন চিকিৎসা সেবায় গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও রোগির চাহিদা অনুযায়ী জনবল বৃদ্ধি করা হয় নাই। ১৯৮০ সনে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট যে জনবল ছিল তা দিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চালানো হচ্ছে অতি গুরুত্বপুর্ন ডায়াগনোসিস সেবা। ২ /৩ বছর আগে জনবল না বাড়িয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ১২১ টি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও সমপরিমান ফার্মাসিস্ট পদ বিলুপ্ত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রায় গত ১০ বছর যাবৎ নিয়োগ পক্রিয়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে বন্ধ আছে, তাছাড়া অবসর জনিত কারনে প্রতি বছর শুন্য পদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনদিন। নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়নি দীর্ঘ দিন যাবৎ। বর্তমানে প্রতি ২/৩ উপজেলা মিলে ১ জনে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কর্মরত আছেন। অর্থাৎ ১ জন টেকনোলজিস্টকে ২/৩ টি উপজেলায় সপ্তাহে ২/৩ দিন করে এক এক উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই রকম। রক্ত পরিসন্চালন কেদ্রে রোটেশন অনুযায়ী ৪ জন টেকনোলজিস্ট দায়িত্ব পালন করার কথা সেখানে কোন জনবল নেই। প্রেষনে নিয়ে আসা ১ জন টেকনোলজিস্ট দিয়ে ব্লাড ব্যাংক চালনো হচ্ছে। প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট রোগি বৃদ্ধি হয়েছে ৪/৫ গুন অথচ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মাত্র২/১ জন। সকল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট দের অবস্থা একই চিত্র। যা সুস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিপন্থী। সরকার যখন স্বাস্থ্য সেবাকে জনগনের দ্বারপ্রান্তে ও সহজলভ্য গতিশীল করতে বদ্ধ পরিকর সেখানে এ অবস্থা চলতে থাকলে চিকিৎসা সেবার সকল প্রয়াস হাড়িয়ে যাবে গভির অন্ধকারে । তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির আনুপাতিক হাড়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট নতুনপদ সৃষ্টি করে সকল শুন্য পদে নিয়োগ দানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি। সেই সাথে গ্র্যাজুয়েট টেকনোলজিস্টদের নতুন পদ সৃষ্টি করে পদায়ন করতে হবে। তা না হলে ডায়াগনোসিস সেবা হুমড়ি খেয়ে চিকিৎসা সেবার সকল অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেবে। (কালেক্টেডঃ Mohammad Ali Jinnah, Sinior Medical Technologist IEDCR. Covid -19 এ স্যাম্পল কালেক্ট এন্ড টেস্ট এ কর্মরত) আপনার মতামত দিন : SHARES ফার্মেসি বিষয়: